স্বামী স্ত্রীর হক এবং একাধিক স্ত্রীদের মাঝে ইনসাফ
#স্বামীর উপর স্ত্রীর হকসমূহ:
১. স্ত্রীর জন্য মাসে কত টাকা খরচ করা জরুরি? এবং খরচের কোয়ালিটি কেমন হবে?
২. বছরে কত জোড়া কাপড় কিনে দিতে হবে?
৩. প্রসাধনীর জন্য কত টাকা ব্যায় করতে হব?
৪. কত ঘর বিশিষ্ট বাসায় রাখতে হবে?
৫. কতদিন পর পর সহবাস করা জরুরি?
৬. কোন স্বামী যদি স্ত্রীকে পূর্ণ তৃপ্তি দিতে না পারে, অর্থাৎ স্ত্রীর অর্গাজম করাতে না পারে, এতে কি পুরুষের গুনাহ হবে? স্ত্রীকে অর্গাজম করিয়ে দেওয়া কি একজন পুরুষের উপর জরুরি?
৭. স্ত্রী যখন চাইবে, তখনই কি তার সাথে সহবাস করা জরুরি?
৮. স্ত্রীর অন্য ঘরের সন্তান লালন-পালন করা কি দায়িত্ব?
৯. অধিক বিবাহ করার জন্য স্ত্রীর অনুমতি নেয়া কি জরুরি?
১০. স্ত্রীর জন্য স্থায়ী বাড়ি করে দেয়া, স্থাবর সম্পত্তি লেখে দেয়া বা গহনা-গাটি কিনে দেয়া কি জরুরি?
#উত্তর:
#একজন স্বামীর উপর স্ত্রীর প্রতি কতটুকু হক আাদায় করা ওয়াজিব? আর কতটুকু মুস্তাহাব? নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
#১নং হক: মোহর আদায় করা।
মোহরের সর্বনিম্ন পরিমান ২.৬ ভরি রূপা, যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৫০০০ টাকা, এতটুকু দেওয়া জরুরী। এর থেকে বেশি ধার্য্য করতে পারবে। সামর্থের চেয়ে বেশি আথবা অধিক বেশি মোহর ধার্য্য করা মাকরূহ।
#২নং হক: বাসস্থানের ব্যবস্থা করা।(ভাড়ার বাড়ি হোক অথবা মালিকানা)
পরিমান: একটা বেডরুম, একটা কিচেন, আর একটা বাথরুম। আর থাকার জন্য কাথা,বালিশ, বিছানা যা লাগবে। এর থেকে বেশি ব্যবস্থা করলে সেটা মুস্তাহাব।( স্ত্রী যদি সেপারেট চায় তাহলে সেপারেট দিতে হবে) ।
#৩নং হক: নফকা দেওয়া ( ভরণ-পোষন)
নফকা হলো তিনটি জিনিস :
১.খাদ্য
২. বস্ত্র
৩.চিকিৎসা
(এছাড়া অন্যান্য যত খরচ আছে , যেমন: গহনা বানিয়ে দেওয়া, মাঝে মাঝে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, দামী দামী জামাকাপড় ও প্রোসাধনি কিনে দেওয়া, বড়ো মোবাইল কিনে দেওয়া, রেস্টুরেন্টে খেতে নিয়ে যাওয়া, বিয়ের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, বাপের বাড়ি নিয়ে যাওয়া, হজ্জ ওমরা করানো, তার পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া, সদক্বা ফিতর আদায় করা, তার অন্য ঘরের সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব নেওয়া, স্থাবর কোন সম্পত্বি লিখে দেওয়া বা বাড়ি বানিয়ে দেওয়া ইত্যাদি কোনটাই হক না। কোনটাই জরুরী না। যদি কেউ করে তাহলে হবে মুস্তাহাব। একান্তই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।)
১.খাদ্য: একদিনের পুর্ণ খাবারের ব্যবস্থা করা। পরিমাণ: আধা সা’অ। যার বর্তমান মূল্য ১০০টাকা। সেই হিসেবে মাসে খানা বাবদ ৩০০০ টাকা খরচ করা ওয়াজিব। ( যদি সন্তান থাকে তার হিসাব ভিন্ন) এর থেকেও বেশি খরচ করলে সেটা হবে মুস্তাহাব। একান্তই এহসান।
২-বস্ত্র: পরিমান হলো, রানিং তিন সেট পোশাকের ব্যবস্থা করা। শীতবস্ত্র দেওয়া এবং পারলে নামাজের জন্য এক সেট পোশাকের ব্যবস্থা করা। কোন একটি ব্যবহারের অযোগ্য হলে আবার ব্যবস্থা করা। এতটুকু জরুরী। এর থেকেও যদি বেশি জামাকাপড় কিনে দেয় তাহলে সেটা হবে গিফ্ট হাদিয়া। যদি মোহরের নিয়ত করে, মোহরও আদায় হয়ে যাবে।
৩-চিকিৎসা: যদি স্ত্রী এমন অসুস্থ হয় যার কারণে সহবাস বন্ধ না থাকে, সেই চিকিৎসা করানো স্বামীর দায়িত্ব।‌ আর যদি এমন অসুস্থ হয় যার কারণে স্ত্রীর সাথে সহবাস বন্ধ থাকে, ওই চিকিৎসার ব্যায় বহন করা স্বামীর উপর জরুরী না। যদি করে তা হবে মুস্তাহাব, সওয়াব পাবে। এক্ষেত্রে স্ত্রী নিজের মোহরের টাকা বা নিজের সম্পত্তি থেকে খরচ করবে।
#বাসস্থান এবং উল্লেখিত তিনটি হকের কোয়ালিটি কেমন হবে? :
বাসস্থান, খাদ্য, বস্ত্র ও চলাচলের ক্ষেত্রে স্ত্রীর বাবার বাড়ীর কোয়ালিটি এবং স্বামীর কোয়ালিটির মাঝামাঝি হবে।
#বি:দ্র: উল্লেখিত তিনটি হক স্বামীর উপর ঐ সময়ই জরুরী যখন স্ত্রী তার বাড়িতে তার বাধ্য হয়ে থাকবে। যদি স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য হয়ে বাবার বাড়িতে বা বোনের বাসায় অথবা অন্য কোথাও অবস্থান করে, তাহলে তখন স্বামীর উপর এই হকগুলো আদায় করা জরুরী না।
#৪নং হক: সহবাস করা: যদি স্ত্রীর সম্মতি না থাকে, তাহলে চার মাসে কমপক্ষে একবার সহবাস করা ওয়াজিব । যদি এর থেকে বেশি করে তাহলে সেটা স্বামীর ইচ্ছা। স্ত্রীর অর্গাজম করে দেওয়া জরুরী না। তবে মুস্তাহাব হলো, নিজের বীর্য আউট হয়ে যাওয়ার পরেও ভিতরে কিছুক্ষণ রেখে দিবে। সাথে সাথে নেমে যাবে না। যাতে স্ত্রী তৃপ্ত হতে পারে। তবে যদি এর থেকেও বেশি সহবাস করে এবং অর্গাজম করিয়ে দেয়, উত্তম হবে। উল্লেখ্য, স্বামী যখনই করতে চাইবে তখনই দিতে হবে। স্ত্রী যখন চাইবে তখনই সাড়া দেওয়া জরুরি না।
#বি:দ্র: যদি স্বামীর লিঙ্গের আয়োতনে ছোট হওয়া বা টাইমিং কম হওয়ার কারনে স্ত্রী পূর্ণ তৃপ্তি না পায় অর্থাৎ স্বামী যদি স্ত্রীর অর্গাজম করে দিতে না পারে তাহলে স্বামী হক নষ্টকারী হয় না। তবে এক্ষেত্রে স্ত্রীর জন্য তার থেকে খোলা তালাক নিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করার অনুমতি আছে। কিন্তু একথা কখনোই বলতে পারবে না যে, স্বামী আমার হক আদায় করতে পারে না। কারণ স্ত্রীর অর্গাজম করিয়ে দেয়া স্বামীর জন্য হক আদায়ের পর্যায়ে পড়েনা।
#৫নং হক: স্ত্রীর আরেকটি হক হলো, স্বামী মারা গেলে তার সম্পদের ৪/৮ ভাগের এক অংশ পাবে।
#সতর্কীকরণ: যদি কোনো স্বামী উল্লেখিত ফরজ হকগুলো আদায় করে, তাহলে হক আদায়কারী বলে বিবেচিত হবে। মুস্তাহাব হকগুলো আদায় না করার কারণে যদি স্ত্রী বলে যে, আমার স্বামী আমার হক আদায় করে না। সেই মহিলা ফাসেক,মাল’উন ও জাহান্নামী বলে বিবেচিত হবে। ভালো না লাগলে, না পোষালে তালাক নিয়ে চলে যাবে। কিন্তু স্বামীর বিরুদ্ধে অপবাদ দিতে পারবে না।
#বি.দ্র.: এই হকগুলো ঐ সমস্ত ভাইদের জন্য, যাদের স্ত্রী মাত্র একটা। তবে যাদের একাধিক স্ত্রী আছে তাদের উপর আরও কিছু হক জরুরি। যা পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
কলেবরের বৃদ্ধির কারণে দলিল উল্লেখ করা হলো না
————————————————

#স্ত্রীর উপর স্বামীর হকসমূহ:

#স্ত্রীর উপরও কিছু হক রয়েছে ওয়াজিব, যেগুলো পালন না করলে স্ত্রী নাশেযা অবাধ্য স্ত্রী বলে গণ্য হবে। আল্লাহ তায়ালার নিকট ফাসেকা মহিলা হিসেবে সাব্যস্ত হবে। আর কিছু হক রয়েছে, যেগুলো পালন করা মুস্তাহাব। করলে ছাওয়াব পাবে। বড় এহসান হবে । কিন্তু না করলে এই নারীকে কোন ধরনের খারাপ বলে মন্তব্য করা যাবে না।
#ওয়াজিব হকগুলো:
#১নং: (وجوب اطاعة الزوج في غير معصية الله) স্বামীর সকল বৈধ আদেশ পালন করা। তবে যদি গুনাহের কোনো আদেশ করে তা পালন করা জরুরি না বরং বৈধ না।
#২য়: (تمكين الاستمتاع) যদি শরয়ী বা তবয়ী কোনো নিষেধাজ্ঞা যেমন: ফরজ রোযা,এহরাম,মাসিক ইত্যাদি না থাকে, তাহলে যখনই স্বামী সহবাস করতে চাইবে, তখনই তার ডাকে সাড়া দেয়া ওয়াজিব। কোনো ওজর সমস্যা ছাড়া যদি স্ত্রী আমার মন চাচ্ছে না, আমার ভালো লাগছেনা বা আমি ব্যস্ত এমন কথা বলে স্বামীকে সহবাস করতে না দেয়, তাহলে ঐ স্ত্রী হক নষ্টকারীনি বলে গন্য হবে।
#৩য়: (خدمة الزوج خاصة) স্বামীর সকল ব্যক্তিগত খেদমত করা ওয়াজিব। তবে তার সন্তান, তার বাবা-মা বা পরিবারের খেদমত করা জরুরি না। তবে যদি কেউ তাদের খেদমত করে, একান্তই এহসান হবে। আমাদের দেশে দেখা যায়, কোনো বৌ যদি সেপারেট থাকতে চায় তাকে ভালমন্দ বলা হয়। তাকে খারাপ ভাবা হয়, এটা সম্পূর্ণ শরয়ীত পরিপন্থী কাজ। কারণ সেপারেশন নারীর হক।
#৪র্থ: (لا يخرج من بيته الا باذنه) স্বামীর অনুমতি ছাড়া কখনোই বাড়ি থেকে বের হবে না। যদি কোনো স্ত্রী স্বামীকে না বলে বাজারঘাটে বা বাবার বাড়ি কিংবা অন্য কোথাও যায়, তাহলে সেই স্ত্রী নাশেযা অবাধ্য বলে গন্য হবে।
আল্লাহর লানত পড়বে তার উপর। তখন তাকে খরচ দেওয়াও জরুরি না।
#৫ম: (لا تدخل في بيته من يكرهه زوجه) স্বামীর অনুমতি ছাড়া তার ঘরে এমন কাউকে ঢুকতে দিবে না, যাকে স্বামী অপছন্দ করে। যদিও তা বৌয়ের বাবা-মা হোক বা ভাইবোন কিংবা স্বামীর নিজের কেউ হোক। তবে স্ত্রী নিজ বাবা,মায়ের সাথে ফোনে কথা বলতে পারবে। বিশেষ কারণ ছাড়া যদি কোনো স্বামী বাবা-মার সাথে কথা বলতে না দেয় তা জুলুম হবে।

#৬ষ্টম: ( حفظ اموال الزوج واولاده) স্বামীর ধন-সম্পদ ও সন্তানদের হেফাজত করা।

#উপরোক্ত বিষয়গুলো স্ত্রীর উপর ওয়াজিব। এ ছাড়া অন্য যা আছে, যেমন: সন্তানের লালন-পালন করে দেওয়া, স্বামীর পরিবারের খেদমত করে দেওয়া,তাকে কামায় করে খাওয়ানো, স্বামীর মেহমানদের আপ্যায়ন করা ইত্যাদি আরো যত কাজ আছে এগুলো মুস্তাহাব। যদি কোনো স্ত্রী উপরোক্ত হকগুলো ১০০% আদায় করে স্বামীর অন্য কোনো খেদমত করে দেয় তাহলে তা হবে মুস্তাহাব, একান্তই এহসান। কিন্তু এর বিনিময়ে টাকা গ্ৰহণ করতে পারবে না।
#সতর্কীকরণ: যদি কোনো স্ত্রী উল্লেখিত ফরজ হকগুলো আদায় করে, তাহলে হক আদায়কারী বলে বিবেচিত হবে। মুস্তাহাব হকগুলো আদায় না করার কারণে যদি স্বামী বলে যে, আমার স্ত্রী আমার হক আদায় করে না। সেই স্বামী জালিম হিসেবে গন্য হবে। ভালো না লাগলে, না পোষালে মোহর আদায় করে সুন্দরভাবে আলাদা হয়ে যাবে। কিন্তু স্ত্রীর বিরুদ্ধে অপবাদ দিতে পারবে না।
————————————————

#একাধিক স্ত্রীর মাঝে আদালতের শরয়ী পদ্ধতি কী?

উত্তর: যাদের একাধিক স্ত্রী আছে, স্ত্রীর পাঁচটি হক আদায় করার সাথে সাথে একাধিক স্ত্রীর মধ্যে আরেকটি হক আদায় করা ওয়াজিব, আর তা হলো আদালত তথা ইনসাফ। অর্থাৎ সকল স্ত্রীর মাঝে ন্যায় করা, কোনো স্ত্রীর উপর জুলুম না করা। যদি কারোর ইনসাফ করার পূর্ণ ইচ্ছা বা সাহস না থাকে তার জন্য একাধিক বিবাহ করার অনুমতি নেই।
আদালত ও ইনসাফের নিয়মনীতি ফিকহের কিতাবে সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে। সংক্ষেপে স্পস্ট করার চেষ্টা করবো,ইনশাআল্লাহ।
কয়েকটি বিষয়ে স্ত্রীদের মাঝে সমান সমান না করলে আদালত নষ্ট হবে, সমতা বজায় রাখা জরুরি। আর বাকিগুলোতে যার যার জরুরত অনুযায়ী পুরণ করবে। সমান সমান করা জরুরি না।
১. রাত জাপান সমান সমান করতে হবে। তবে কোনো স্ত্রী যদি দূরে থাকার কারণে বা যেকোনো কারণে নিজের এই হক ছেড়ে দেয়, তাহলে সমান সমান করা জরুরি না। রাতজাপনে সমান সমান করা জরুরি কিন্তু সহবাসের ক্ষেত্রে এটি জরুরী না। যদি কোনো স্ত্রীর সাথে সহবাস কম/বেশি হয়, না ইনসাফী হবে না।
২. জরুরতের অতিরিক্ত গিফট বা উপহার ক্ষেত্রে সমান করা জরুরি। যেমন যদি স্ত্রীদেরকে ঈদের উপহার দিতে চায়, সকলকে সমান দিতে হবে। তবে জরুরতের ক্ষেত্রে যার যতটুকু লাগে বা যেই পরিবারে যতটুকু লাগে দিবে। কমবেশি হলে সমস্যা নেই। যেমন এক স্ত্রীর ৩ সন্তান আছে, তাদের জন্য মাসে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়, আর এক স্ত্রীর মাত্র ১ সন্তান, তার জন্য মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। এতে আদালত নষ্ট হবে না। এটাই ইনসাফ।
যেমন: সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করা জরুরী কিন্তু সকল সন্তানকে সমান খরচ দেওয়া জরুরি না। কোন ছেলের জন্য ১০ হাজার টাকা খরচ হয়, কোন ছেলের জন্য ৫০০০ , কোলের ছেলের পিছনে এক দুই হাজার। এটা না ইনসাফি না। ঠিক তেমনি কোন স্ত্রী অসুস্থতার কারণে তার পেছনে এক্সট্রা ৩/৪ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হয়, এটি অন্য স্ত্রীকে দেওয়া জরুরি না। কারো ৫২ ঝুল বোরকা লাগে কারো লাগে ৫৬ বড় সাইজ, এখানে সমান হওয়া জরুরি না। এটা না ইনসাফি না।
আদালত বা ইনসাফ তখনই নষ্ট হবে, যখন একজনের খরচ বহন করে আর অন্য জনকে খরচ দিতেই চায়না। অথবা একজনকে খুব ভালো কোয়ালিটিতে রাখে, ভালো বাসা দেয়, দামী দামী জামাকাপড় দেয়, আর একজনকে একেবারে নরমাল কোয়ালিটি দেয়। এক স্ত্রীর নামে জমি লিখে দিলো, অন্যজনকে দিলো না। এটা মারাত্মক জুলুম। তবে প্রয়োজনীয় খরচের ক্ষেত্রে সবাইকে সমান দেওয়া জরুরি না। যার যার খরচ ও হক আদায় করলেই আদালত পূর্ণ হয়ে যাবে।
৩. মীরাছ। স্বামী মারা গেলে সকল স্ত্রী সমান মীরাছ পাবে।
এইগুলোতে আদালতের জন্য সমান সমান করা জরুরি।
আর অন্যান্য সকল বিষয়ে সমান সমান করাটা উত্তম কিন্তু জরুরী না, সমান সমান না করলেও আদালত নষ্ট হবে না।
যেমন: মুহাব্বতের ক্ষেত্রে। যদি কোনো স্ত্রীর উপর তার ভালো আচরণের জন্য একটু মুহাব্বাত বেশি থাকে সমস্যা নেই। সফরে বের হবার ক্ষেত্রে: যদি সফরের সুবিধার্থে কোনো স্ত্রীকে বেশি নেওয়া হয়, তাহলে সমস্যা নেই। তবে সবাইকেই সফরের সুযোগ দেওয়া উত্তম।
মোট কথা আপনি যদি সকল বিষয়ে সমান সমান মেইনটেইন করতে পারেন তো বহুত উত্তম। তবে উল্লিখিত ৩ বিষয়ে সমান করা ওয়াজিব। অন্যগুলোতে মুস্তাহাব। করতে পারলে ভালো। খেয়াল রাখতে হবে, যেনো কারোর উপর যেনো জুলুম না হয়।
হযরত আশরাফ আলী থানবী রহ. এর তরমুজ কাটার ঘঠনা বা সাবান দুই ভাগ করার গল্প শুনিয়ে আদালতকে আমরা এমনভাবে কঠিন করে উপস্থাপনা করি বা ব্যাখ্যা দেই, মনে হয় পৃথিবীতে কেউ আদালত করতে পারবে না। এই ধারণাটি ভুল। আদালত খুব জটিল কিছু নয়, এত সেন্সিটিভও নয়। শরীয়ত এই ক্ষেত্রে অনেক বিষয়ে সহজ করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন:
ولن تستطيعوا ان تعدلوا بين النساء ولو حرصتم، فلا تميلوا كل الميل فتذروها كالمعلقه….
অর্থ: তোমরা যতই চাও স্ত্রীদের মাঝে সকল বিষয়ে পূর্ণ আদালত করতে সক্ষম হবা না। তবে এমন যেনো না হয় যে, একজনের দিকে পুরো ঝুকে গেলা আর অন্যজনকে একেবারেই ফেলে রাখলা, তাহলেই যথেষ্ট হবে। (অনেকেই এই আয়াতের মর্ম না বুঝে ভুল ব্যাখ্যা করেন)
দেখুন আয়াতে এই বিষয়টি কত সহজ করা হয়েছে। আদালত যদি এতটাই কঠিন ও সেন্সিটিভ হতো যে কেউ পারবে না, তাহলে অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম যুদ্ধ জিহাদ ও হাজারো গরীবতার মধ্যে একাধিক বিবাহ করতেন না।
মুহতারাম! একটি কথা বুঝতে হবে। এই সমাজের লাখ লাখ মানুষ জেনায় লিপ্ত। লাখ লাখ নারী স্বামীহারা। একাধিক স্ত্রী থাকলে তার অধিকাংশরাই গুনাহে জড়াতো না। তাদেরো হেফাজত হয়ে যেতো। এখন বলুন আদালতের ভয় দেখিয়ে একাধিক বিবাহকে বন্ধ করা উত্তম হবে? না আদালত সহজ করে জেনা থেকে বাঁচানো উত্তম হবে। ইসলাম যেহেতু আদালতকে সহজ করেছেন, আমরা কঠিন বানাবো কেনো?
আপনি যদি ৩/৪/১০ সন্তানের মধ্যে আদালত করতে পারেন, শিক্ষকদের মধ্যে আদালত করতে পারেন, ভাই-বোনদের মধ্যে আদালত করতে পারেন, দুনিয়ার সব বিষয়ে আদালত করতে পারেন তাহলে মুহাব্বতের ৪ স্ত্রী বা একাধিক স্ত্রীর মাঝেও পারবেন। কোনো সমস্যা নেই। আদালতে একটু কমতি হলেও তার চেয়েও জেনার গুনাহ বেশি ভয়াবহ। আল্লাহ আমাদের সকলকে সহীহ ফাহম দান করুন।
বাকি প্রশ্নগুলোর উত্তর আস্তে আস্তে দেওয়া হবে। আর ২৮ তারিখের প্রোগ্রামে সবিস্তারে আলোচনা করা হবে, ইনশাআল্লাহ। আপনিও এই প্রোগ্রামে শরীক হতে পারেন।
বি.দ্র: আসলে এই অধ্যায়টি অনেক বড় আর আলোচনা না থাকায় আমাদের নিকটে জটিল হয়ে গিয়েছে। যদি কারোর আরও প্রশ্ন থাকে, আমাদের ইনবক্সে লিখে পাঠাবেন ইনশাআল্লাহ। Ideal Marriage Bureau-IMB আপনার খিদমাহ করতে প্রস্তুত আছে, ইনশাআল্লাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *