একসাথে ৪ স্ত্রীর বেশি রাখা বৈধ নয়। তবে জীবনে ৮/১০টা বিবাহ হওয়া বা অধিক বাঁদী রাখা কোনো অন্যায় বা ভর্ৎসনার বিষয় নয়।
إلا على أزواجهم أو ما ملكت أيمانهم، فإنهم غير ملومين
এক বিয়ে হোক বা একাধিক বিবাহ, অনাদর্শিকভাবে করা অপরাধ, একে অপরের উপর জুলুম করা অন্যায়। যৌক্তিক কারণ ছাড়া তালাক দেওয়াটাও মারাত্মক অন্যায়।
বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ এমন রয়েছে, যার একটা স্ত্রী টিকতে এই পর্যন্ত ৩/৪টা বিবাহ হয়েছে। কারো স্ত্রী পরপর দুইটা মারা গিয়েছে। করো একটা মারা গিয়েছে একটা ডিভোর্স হয়েছে। এভাবেই ৩/৪টা বিয়ে হওয়ার পর আপাতত তার একজন স্ত্রী আছে।
অতএব যারা একত্রে চারজন স্ত্রী রাখবে, এটাই স্বাভাবিক যে তারও দুই তিনটা স্ত্রী সাথে যৌক্তিক কারণে তালাক হতে পারে। সাহাবাদের জীবনেও অনেক তালাক হয়েছে।
হ্যাঁ, যদি সত্যিই কেউ জুলুম করে তাহলে এক বৌ হোক আর একাধিক সবাই অপরাধী।
যে জালেম, সে এক স্ত্রীর উপরও জুলুম করে। আর যে আদেল সে একাধিক স্ত্রীর প্রতিও আদেল। এই জন্যই এক স্ত্রীর উপর জুলুমকারী বাংলাদেশে লাখ লাখ পুরুষ রয়েছে। লাখ লাখ নারী নির্যাতন মামলা ঝুলছে, যদিও অধিকাংশই মিথ্যা মামলা। তা কারোর অজানা নয়।
ঠিক দ্বিতীয় তৃতীয় বিবাহকারী অনেক পুরুষও স্ত্রীদের প্রতি জালিম হয়, পুরোপুরি ইনসাফ আদায় করে না। আমরা তাদেরকে সঠিক পথে আসার আহ্বান জানাই। أنا بريء منهم
যারা আমাকে বা অন্য যে কারো নামে ৮/১০টা বিবাহ করেছে বলে খারাপ মন্তব্য করেন। তাদেরকে একটি কথা বলবো:
আজ নাস্তিক, মুরতাদদের সুরে সুর মিলিয়ে আপনিও যদি অনেকগুলো বিবাহ এবং তালাককে জঘন্য বলেন, আর বর্তমান সময় এটা বুঝিয়ে দেন যে, যাদের জীবনে একাধিক বিয়ে হয়েছে তারা খারাপ মানুষ। আর এটাই যদি স্টাবলিস্ট হয়ে যায়, আগামী প্রজন্ম যখন সাহাবাদের ১০/১৫টি বিবাহের কথা শুনবে, রাসূল সা: এর ১৫/১৬টি বিবাহের কথা শুনবে সেদিন, তাদেরকেও গালি দিয়ে আপনার সন্তান নাস্তিক হবে।
আরে নাস্তিকরা তো নবীদেরকেও একাধিক স্ত্রী নিয়ে গালি দেয়। এমনকি জান্নাতে ৭০জন স্ত্রী হবে এটা নিয়েও মন্তব্য করে। আপনিও তাদের সুরে সুর মিলাচ্ছেন।
আর এই জন্যই বিষয়গুলোকে স্পষ্ট করার চেষ্টা করছি।
সাহাবাদের জীবনে অনেকগুলি বিবাহ হয়েছে, অনেকগুলো তালাক হয়েছে, তবে সবগুলো ছিল যৌক্তিক এবং আদর্শিক। অতএব বর্তমানেও যদি কারো অনেকগুলো বিবাহ হয় এবং তালাক হয়, চাই এক স্ত্রী বিশিষ্ট হোক বা একাধিক স্ত্রী বিশিষ্ট, যদি তাদের তালাকের মাঝে কোন জুলুম অত্যাচার না থাকে, উভয়ে যদি আদর্শিক হয় তাহলে কোন সমস্যা নেই।
যদি কেউ সত্যিই জুলুম করে তার পক্ষে আমরা নই। তবে যতগুলো ঘটনা শুনা যায় তার অধিকাংশই এক পাক্ষিক কথার ভিত্তিতে হয়। এক দুইটা ব্যক্তিগত ঘটনা কে কেন্দ্র করে পুরা আদর্শের উপর কথা বলা নাস্তিক মুরতাদের অভ্যাস।
হযরত আবু বকর রা: ৪টি বিবাহ করেছিলেন।
হযরত উমর রা: ৮টি বিবাহ করেছিলেন। তার ৩জন স্ত্রীর সাথে তালাক হয়েছিল, ১ জন মারা গিয়েছেন।
হযরত আলী রা: ৯/১১টি বিবাহ করেছেন।
হযরত উসমান রা: ৭টি বিবাহ করেছেন।
জান্নাতের সর্দার হযরত হাসান রা: জীবনে মতান্তরে ৭০টি বিবাহ হয়েছে।
হযরত আনাস রা: ২৩টি বিবাহ হয়েছে। ১১০টি সন্তান ছিলো।
নারী সাহাবীয়াদেরও কারো কারো জীবনে ৮/১০বার বিবাহ হয়েছে। নিম্নের বইটি পড়বেন, তাহলে আরোও বুঝে আসবে। আর যারা নাস্তিক তাদের বুঝে আসবে না। তারাতো নবীজিকেও গালাগালি করে। আপনি আজ বর্তমানের কাউকে নিয়ে কটুকথা বলছেন, কাল নাস্তিকরা যদি আপনাকে প্রশ্ন করে: তোমাদের ৪খলিফাও তো ৮টা বিয়ে করেছে, ৩টা তালাক দিয়েছে? সেদিন কী জবাব দিবেন। নাকি নিজেও ঈমান খুয়াবেন?
অতএব অনেকগুলো বিবাহ যদি কারো জীবনে হয়, এটা খারাপ কিছু নয়। চোখ বুজে তাকে খারাপ মন্তব্য করা যাবে না।
আর কারো জীবনে অনেকগুলো বিবাহ হতেই পারে। সবগুলোই যে ডিভোর্স হয় এমন না, এমনও অনেক ভাইয়েরা আমাদের অফিসে এসেছেন যাদের ২/৩ টা স্ত্রী মারা গিয়েছে এই পর্যন্ত।
সাহাবাদেরও যে সবগুলো তালাক হয়েছে এমন না, কিছু তালাক হয়েছে, কিছু মারা গিয়েছে। অতএব শুধু বিয়ের সংখ্যা অনেক বেশি হলেই ওই মানুষটি খারাপ এই ধারণা করলে, একসময় মানুষ সাহাবাদের কেউ খারাপ বলে ঈমান হারাবে।
আর বাংলাদেশে যারা ৭/৮টা হালাল বিবাহ নিয়ে কটুক্তি করেন, যৌক্তিক তালাক নিয়ে চোখ বুজেই খারাপ মন্তব্য করেন, তার ব্যাপারে না জেনেই আঙ্গুল তুলেন তাদেরকে বলবো:
ভাই আমাদের দেশে তো অনেকেই রয়েছেন, তার বউ থাকে একটা, তবে ২০-৩০ টা ৪০ টা ৫০ টা বেশ্যার কাছে জীবনে যাওয়া হয়ে যায়। ১৫/২০টা গার্লফ্রেন্ডের সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করে ফেলে। একজন নারী ৫/৬টা প্রেম করে ফেলে।
কারো যদি যৌক্তিক কারণে হালালভাবে শরীয়ত অনুযায়ী ১০/১৫টাও বিবাহ হয় সে খারাপ নয়। فإنهم غير ملومين.
ফতোয়ায়ে বাযযাযিয়ার মধ্যে রয়েছে: যে একাধিক স্ত্রী বা হাজার বান্দি নিয়ে কটুক্তি করবে তার ঈমান চলে যাওয়ার ভয় রয়েছে।
খারাপ তো সে যে জুলুম করবে। খারাপ তো সে যার বউ একটা থাকে, আর অনেকগুলো নারীকে ব্যবহার করে অন্যায় ভাবে।